প্রশ্ন
আমার এক বান্ধবী বলে, ইসলাম নারীকে কোনো মর্যাদা দেয়নি। বরং নারীর মর্যাদা ইসলাম ক্ষুণ্ণ করেছে। আমি ইসলাম সম্পর্কে কম জানি। যতটুকু জানি সে হিসেবে তাকে কিছু কথা বলেছি। তবে তার কথার পরিপূর্ণ জবাব দিতে পারিনি। তাই এ বিষয়ে ইসলামের কিছু টেক্সট জানতে চাচ্ছি।
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
ইসলাম-পূর্বযুগে নারীকে মানুষ মনে করা হত না। পুরুষদের ভোগ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছিল। পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট মনে করা হত তাদের। কন্যা সন্তান জন্ম নিলে জীবন্ত পুঁতে ফেলা হত। কিন্তু ইসলামে এসে তাদেরকে এই অমানবিক অবস্থা থেকে উদ্ধার করে যথাযোগ্য অধিকার ও সম্মানজনক মর্যাদা প্রদান করে। মা, বোন, স্ত্রী ও কন্যা হিসেবে দিয়েছে বিশেষ মর্যাদা। কুরআন হাদিস রিসার্চ করলে এ বিষয়টিই প্রতীয়মান হয়। সুতরাং, আপনার বান্ধবীর বক্তব্য সঠিক নয়। বরং পৃথিবীতে ইসলামই একমাত্র ধর্ম যা নারীকে তার যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়েছে। অন্য কোনো ধর্ম তা দিতে পারেনি।
কুরআন মাজিদে ইরশাদ হচ্ছে,
وَ لَہُنَّ مِثۡلُ الَّذِیۡ عَلَیۡہِنَّ بِالۡمَعۡرُوۡفِ ۪ وَ لِلرِّجَالِ عَلَیۡہِنَّ دَرَجَۃٌ ؕ وَ اللّٰہُ عَزِیۡزٌ حَکِیۡمٌ
‘এবং পুরুষদের উপর নারীদেরও হক আছে, যেমন নিয়ম অনুযায়ী পুরুষদের নারীদের উপরও হক আছে, অবশ্য নারীদের উপর পুরুষদের বিশেষ মর্যাদা আছে এবং আল্লাহ মহাপরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাশীল।’ [সূরা বাকারা, আয়াত: ২২৮]
অন্য আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে,
ہُنَّ لِبَاسٌ لَّکُمۡ وَ اَنۡتُمۡ لِبَاسٌ لَّہُنَّ
‘তারা তোমাদের জন্য পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের জন্য পরিচ্ছদ।’ [সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৭]
আরেক আয়াতে এসেছে,
وَ لِلنِّسَآءِ نَصِیۡبٌ مِّمَّا تَرَکَ الۡوَالِدٰنِ وَ الۡاَقۡرَبُوۡنَ مِمَّا قَلَّ مِنۡہُ اَوۡ کَثُرَ ؕ نَصِیۡبًا مَّفۡرُوۡضًا
‘আর মাতা-পিতা এবং আত্মীয়দের রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে নারীদেরও অংশ আছে, তা অল্পই হোক আর বেশিই হোক, এক নির্ধারিত অংশ।’ [সূরা নিসা, আয়াত: ৭]
হাদিস শরিফে এসেছে,
‘আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক লোক রাসূল (সা.) এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করল: হে আল্লাহর রাসূল! আমার নিকট কে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার অধিক হকদার? তিনি বললেন: তোমার মা। লোকটি বলল: অতঃপর কে? রাসূল (সা.) বললেন: তোমার মা। সে বলল: অতঃপর কে? তিনি বললেন: তোমার মা। সে বলল: অতঃপর কে? তিনি বললেন: অতঃপর তোমার বাবা।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৯৭১]
এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
‘মুয়াবিয়া বিন জাহিমা আল-সুলামি (রা.) বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: আমি রাসূল (সা.) এর কাছে এসে বললাম: ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমি আপনার সাথে জিহাদে যেতে চাই; এর মাধ্যমে আল্লাহ্র সন্তুষ্টি ও আখেরাত অর্জন করতে চাই। তিনি বললেন: তোমার জন্য আফসোস! তোমার মা কি জীবিত? আমি বললাম: হ্যাঁ। তিনি বললেন: ফিরে গিয়ে তার সেবা কর। এরপর আমি অন্যভাবে আবার তাঁর কাছে এসে বললাম: ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমি আপনার সাথে জিহাদে যেতে চাই। এর মাধ্যমে আল্লাহ্র সন্তুষ্টি ও আখেরাত অর্জন করতে চাই। তিনি বললেন: তোমার জন্য আফসোস! তোমার মা কি জীবিত? আমি বললাম: হ্যাঁ। তিনি বললেন: তার কাছে ফিরে গিয়ে তার সেবা কর। এরপরও আমি তাঁর সামনে থেকে এসে বললাম: ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমি আপনার সাথে জিহাদে যেতে চাই। এর মাধ্যমে আল্লাহ্র সন্তুষ্টি ও আখেরাত অর্জন করতে চাই। তিনি বললেন: তোমার জন্য আফসোস! তোমার মা কি জীবিত? আমি বললাম: হ্যাঁ। তিনি বললেন: তোমার জন্য আফসোস! তুমি তার পায়ের কাছে পড়ে থাক। সেখানেই জান্নাত রয়েছে।’ [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২৭৮১]
আরেক হাদিসে এসেছে,
‘আবু সাঈদ খুদরী (রা.) হতে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) বলেছেন: যার তিনটি মেয়ে অথবা তিনটি বোন আছে, অথবা দুটি মেয়ে অথবা দুটি বোন আছে, সে তাদের প্রতি ভাল ব্যবহার করলে এবং তাদের (অধিকার) সম্পর্কে আল্লাহ তাআলাকে ভয় করলে তার জন্য জান্নাত নির্ধারিত আছে।’ [সুনানে তিরমিযি, হাদিস: ১৯১৬]
এছাড়াও কুরআনের অসংখ্য আয়াত ও হাদিসে নারীর মর্যাদা সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র: http://www.drkhalilurrahman.com/4713/article-details.html