প্রশ্ন
একটি বইতে পড়েছি, মদকে চারটি ধাপে হারাম করা হয়েছে। আমি সেই চারটি ধাপের কথা জানতে চাচ্ছি।
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
আল্লাহ তাআলা মাদককে চারটি পর্যায়ে হারাম করেছেন। প্রথম পর্যায়: আল্লাহ তাআলা কুরআনের আয়াত নাজিলের মাধ্যমে ঘোষণা দিলেন যে, তোমরা খেজুর ও আঙ্গুর দ্বারা মাদক তৈরির পাশাপাশি উত্তম খাদ্য বস্তুও তৈরি করে থাক। যেমন পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,
وَمِنْ ثَمَرَاتِ النَّخِيلِ وَالْأَعْنَابِ تَتَّخِذُونَ مِنْهُ سَكَرًا وَرِزْقًا حَسَنًا
‘আর খেজুর গাছের ফল ও আঙ্গুর হতে তোমরা মাদক ও উত্তম খাদ্য গ্রহণ করে থাক।’ [সূরা নাহল, আয়াত: ৬৭]
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা সরাসরি মাদক হারাম করেননি, তবে জানিয়ে দিলেন, মাদক ভিন্ন জিনিস। আর উত্তম খাদ্যবস্তু ভিন্ন জিনিস। এই আয়াত নাজিল হওয়ার পর সাহাবায়ে কেরাম ধারণা করে নিলেন যে, মাদক সম্পর্কে কোনো বিধান আল্লাহ তাআলা অচিরেই নাজিল করবেন।
দ্বিতীয় পর্যায়: এরপর সাহাবায়ে কেরাম যখন মাদক সম্পর্কে রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করেন তখন আল্লাহ তাআলা কুরআনের আয়াত নাজিলের মাধ্যমে তাঁর প্রিয় হাবীবকে জানিয়ে দিলেন যে, মদের মাঝে উপকার ক্ষতি উভয়ই রয়েছে। তবে উপকারের চেয়ে ক্ষতির পরিমাণটা বেশি। কুরআনে এসেছে,
يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ قُلْ فِيهِمَا إِثْمٌ كَبِيرٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَإِثْمُهُمَا أَكْبَرُ مِنْ نَفْعِهِمَا
‘তারা তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বল, এ দু’টোয় রয়েছে বড় পাপ ও মানুষের জন্য উপকার। আর তার পাপ তার উপকারিতার চেয়ে অধিক বড়।’ [সূরা বাকারা, আয়াত: ২১৯]
এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা সাহাবায়ে কেরামের অন্তরে মাদকের প্রতি কিছুটা ঘৃণার সৃষ্টি করে দিলেন। ফলে সাহাবায়ে কেরাম দু’দলে ভাগ হয়ে গেলেন। একদল ক্ষতির দিক বিবেচনায় তা বর্জন করলেন। আরেকদল চিন্তা করলেন, যেহেতু কিছুটা উপকার রয়েছে তাই তা গ্রহণে কোনো সমস্যা হবে না।
তৃতীয় পর্যায়: এ পর্যায়ে আল্লাহ তাআলা আয়াত নাজিল করে জানিয়ে দিলেন, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নামাজের কাছেও যাওয়া যাবে না। যেমনটি ইরশাদ হয়েছে,
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَقْرَبُوا الصَّلَاةَ وَأَنْتُمْ سُكَارَى
‘হে মুমিনগণ, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তোমরা নামাজের নিকটবর্তী হয়ো না।’ [সূরা নিসা, আয়াত: ৪৩]
এই আয়াত নাজিলের পর আরো কিছু সাহাবী মদকে বর্জন করলেন। তবে মদ সরাসরি হারাম না করার কারণে অল্প কিছু সংখ্যক সাহাবী তখনো নামাজের সময় ছাড়া অন্য সময় মদ পান করতেন।
চতুর্থ পর্যায়: পরিশেষে আল্লাহ তাআলা কুরআনের আয়াত নাজিলের মাধ্যমে মদকে চূড়ান্তভাবে হারাম করে দিলেন। কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে,
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
‘হে মুমিনগণ, নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদী ও ভাগ্যনির্ধারক তীরসমূহ তো নাপাক শয়তানের কর্ম। সুতরাং তোমরা তা পরিহার কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ [সূরা মায়েদা, আয়াত: ৯০]
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র: https://www.drkhalilurrahman.com/7906/article-details.html