প্রশ্ন
কিছুদিন আগে এক ব্যক্তি ট্রেনে আগুন লাগার পরও ট্রেন থেকে নামেনি। কারণ তার বউ বাচ্চা আগুনে পুড়ে গিয়েছিল। জানতে চাচ্ছি, এ ব্যক্তির ট্রেন থেকে না নামাটা কি সুইসাইড হিসেবে গণ্য হবে?
উত্তর
بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
বিষয়টি ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। যদি শুধুমাত্র স্ত্রী ও বাচ্চা পুড়ে যাওয়ার কারণে সে ট্রেন থেকে বের না হয়ে থাকে তাহলে তা আত্মহত্যা হিসেবে গণ্য হবে। আর আত্মহত্যা শরিয়তে নাজায়েয ও হারাম। হাদিস শরিফে এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه قَالَ: شَهِدْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، فَقَالَ لِرَجُلٍ مِمَّنْ يَدَّعِي الْإِسْلَامَ: هَذَا مِنْ أَهْلِ النَّارِ فَلَمَّا حَضَرَ الْقِتَالُ قَاتَلَ الرَّجُلُ قِتَالًا شَدِيدًا فَأَصَابَتْهُ جِرَاحَةٌ، فَقِيلَ: يَا رَسُولَ اللهِ، الَّذِي قُلْتَ: إِنَّهُ مِنْ أَهْلِ النَّارِ، فَإِنَّهُ قَدْ قَاتَلَ الْيَوْمَ قِتَالًا شَدِيدًا وَقَدْ مَاتَ، فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم: إِلَى النَّارِ، قَالَ: فَكَادَ بَعْضُ النَّاسِ أَنْ يَرْتَابَ، فَبَيْنَمَا هُمْ عَلَى ذَلِكَ إِذْ قِيلَ: إِنَّهُ لَمْ يَمُتْ، وَلَكِنَّ بِهِ جِرَاحًا شَدِيدًا، فَلَمَّا كَانَ مِنَ اللَّيْلِ لَمْ يَصْبِرْ عَلَى الْجِرَاحِ فَقَتَلَ نَفْسَهُ، فَأُخْبِرَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بِذَلِكَ فَقَالَ: اللهُ أَكْبَرُ، أَشْهَدُ أَنِّي عَبْدُ اللهِ وَرَسُولُهُ ثُمَّ أَمَرَ بِلَالًا فَنَادَى بِالنَّاسِ: إِنَّهُ لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ إِلَّا نَفْسٌ مُسْلِمَةٌ، وَإِنَّ اللهَ لَيُؤَيِّدُ هَذَا الدِّينَ بِالرَّجُلِ الْفَاجِرِ
‘আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর সঙ্গে এক যুদ্ধে উপস্থিত ছিলাম। তখন তিনি ইসলামের দাবীদার এক ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে বললেন, এ ব্যক্তি জাহান্নামী অথচ যখন যুদ্ধ শুরু হল, তখন সে লোকটি ভীষণ যুদ্ধ করল এবং আহত হল। তখন বলা হল, হে আল্লাহর রাসূল! যে লোকটি সম্পর্কে আপনি বলেছিলেন সে লোকটি জাহান্নামী, আজ সে ভীষণ যুদ্ধ করেছে এবং মারা গেছে। রাসূল (সা.) বললেন, সে জাহান্নামে গেছে। রাবী বলেন, একথার উপর কারো কারো অন্তরে এ বিষয়ে সন্দেহ সৃষ্টির উপক্রম হয় এবং তাঁরা এ সম্পর্কিত কথাবার্তায় রয়েছেন, এ সময় খবর এল যে, লোকটি মরে যায়নি বরং মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। যখন রাত্রি হল, সে আঘাতের কষ্টে ধৈর্যধারণ করতে পারল না এবং আত্মহত্যা করল। তখন রাসূল (সা.)-এর নিকট এ সংবাদ পৌঁছানো হল, তিনি বলে উঠলেন, আল্লাহু আকবার! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি অবশ্যই আল্লাহ তাআলার বান্দা এবং তাঁর রাসুল। অতঃপর রাসূল (সা.) বিলাল (রা.)-কে আদেশ করলেন, তখন তিনি লোকদের মধ্যে ঘোষণা দিলেন যে, মুসলিম ব্যতীত কেউ বেহেশতে প্রবেশ করবে না। আর আল্লাহ তাআলা (কখনো কখনো) এই দ্বীনকে মন্দ লোকের দ্বারাও সাহায্য করেন।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩০৬২; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১১১]
আর যদি বের হওয়ার চেষ্টা করার পরও বের না হতে পারে তাহলে সে শহিদি মৃত্যু লাভ করবে। হাদিস শরিফে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ جَابِرِ بْنِ عَتِيكٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، أَنَّهُ مَرِضَ فَأَتَاهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَعُودُهُ فَقَالَ قَائِلٌ مِنْ أَهْلِهِ إِنْ كُنَّا لَنَرْجُو أَنْ تَكُونَ وَفَاتُهُ قَتْلَ شَهَادَةٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ شُهَدَاءَ أُمَّتِي إِذًا لَقَلِيلٌ الْقَتْلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ شَهَادَةٌ وَالْمَطْعُونُ شَهَادَةٌ وَالْمَرْأَةُ تَمُوتُ بِجُمْعٍ شَهَادَةٌ – يَعْنِي الْحَامِلَ – وَالْغَرِقُ وَالْحَرِقُ وَالْمَجْنُوبُ – يَعْنِي ذَاتَ الْجَنْبِ – شَهَادَةٌ
‘জাবির ইবনে আতীক (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখতে আসেন। জাবির (রা.) -এর পরিবারের কেউ বলল, আমরা আশা করতাম যে, সে আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়ে মৃত্যুবরণ করবে। রাসূল (সা.) বলেন, তাহলে আমার উম্মাতের শহীদের সংখ্যা তো খুব কম হয়ে যাবে। আল্লাহর পথে নিহত হলে শহীদ, মহামারীতে নিহত হলে শহীদ, যে মহিলা গর্ভাবস্থায় মারা যায় সে শহীদ এবং পানিতে ডুবে, আগুনে পুড়ে ও ক্ষয়রোগে মৃত্যুবরণকারী শহীদ।’ [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২৮০৩]
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র: https://www.drkhalilurrahman.com/25065/article-details.html