প্রশ্ন
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আসরের নামাযের পর আমাদের মসজিদে একটি জানাযা উপস্থিত হয়। কিন্তু মৃত ব্যক্তির অভিভাবক ও নিকটাত্মীয়রা আসতে দেরি হওয়ায় নামায বিলম্বিত করা হয়। তখন উপস্থিত মুসল্লিদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি হয় যে, এই সময়ে জানাযার নামায পড়া যাবে কিনা। তো আমার জানার বিষয় হলো, এই সময়ে জানাযার নামায পড়ার বিধান কী?
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
حامدا و مصليا و مسلما
সাধারণ অবস্থায় জানাযার ক্ষেত্রে বিলম্ব না করার কথা হাদিসে এসেছে। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন-
أَسْرِعُوا بِالْجِنَازَةِ، فَإِنْ تَكُ صَالِحَةً فَخَيْرٌ تُقَدِّمُونَهَا، وَإِنْ يَكُ سِوَى ذَلِكَ، فَشَرٌّ تَضَعُونَهُ عَنْ رِقَابِكُمْ.
তোমরা জানাযাকে দ্রুত নিয়ে যাও। কেননা মৃত বক্তি যদি নেক লোক হয়, তাহলে কল্যাণের দিকেই তোমরা তাকে নিয়ে যাচ্ছ। আর যদি মন্দ হয় তাহলে সেক্ষেত্রে তোমাদের ঘাড় থেকে আপদ সরিয়ে দিচ্ছ। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৩১৫; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৪৪)
অন্যদিকে আরেকটি হাদিসে রাসূল (সা.) তিন সময়ে জানাযার নামায ও অন্যসব নামায পড়তে নিষেধ করেছেন।
হযরত উকবা বিন আমের (রা.) বলেন-
ثَلَاثُ سَاعَاتٍ كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَنْهَانَا أَنْ نُصَلِّيَ فِيهِنَّ، أَوْ أَنْ نَقْبُرَ فِيهِنَّ مَوْتَانَا: حِينَ تَطْلُعُ الشَّمْسُ بَازِغَةً حَتّٰى تَرْتَفِعَ، وَحِينَ يَقُومُ قَائِمُ الظَّهِيرَةِ حَتّٰى تَمِيلَ الشَّمْسُ، وَحِينَ تَضَيَّفُ الشَّمْسُ لِلْغُرُوبِ حَتّٰى تَغْرُبَ.
তিনটি সময় এমন রয়েছে, যাতে রাসূল (সা.) আমাদের নামায পড়তে বা আমাদের মৃতদেরকে দাফন করতে (অর্থাৎ তাদের জানাযা পড়তে) নিষেধ করতেন।
১. সূর্য উদিত হওয়ার সময় থেকে (দুই বর্ষা পরিমাণ) উপরে ওঠা পর্যন্ত।
২. দ্বিপ্রহরে ছায়া যখন স্থীর থাকে তখন থেকে সূর্য মধ্যাকাশ থেকে হেলে যাওয়া পর্যন্ত।
৩. সূর্য অস্তমুখী হওয়া থেকে অস্ত যাওয়া পর্যন্ত। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৩১)
অতএব স্বাভাবিক অবস্থায় জানাযা বিলম্ব করবে না। তবে উক্ত নিষিদ্ধ সময়ের আগে জানাযা হাজির হলে ঐ সময় শেষ হওয়ার পর তা আদায় করবে। তবে যদি কোনো ক্ষেত্রে এমন হয় যে, বিলম্ব করলে লাশের ক্ষতি হওয়ার আশংকা থাকে বা অভিভাবক ও আত্মীয়দের বেশি সমস্যা হয়, কিংবা জানাযা এমন এলাকায় হয় যেখানে রাতে দাফন করতে অসুবিধা হয়, তাহলে এ ধরনের ওজরের কারণে নিষিদ্ধ সময়ে জানাযা আদায় করে নিতে পারবে।
-আলমাবসূত, সারাখসী ২/৬৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৩২৯; বাদায়েউস সানায়ে ১/২২৯; আলবাহরুর রায়েক ১/২৪৯; ফাতহুল কাদীর ১/২০২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৬৭, ২২৩; ইলাউস সুনান ৮/৩৫৮
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র:https://www.drkhalilurrahman.com/?p=27274&preview=true