প্রশ্ন
আমরা সাধারণত আমাদের দেশে দেখি শ্বশুর-শাশুড়িকে বাবা-মা বলে সম্বোধন করা হয়। তাই আমি জানতে চাচ্ছি, শ্বশুরকে আব্বু ও শাশুড়িকে আম্মু বলে ডাকা যাবে কি?
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
حامدا و مصليا و مسلما
শ্বশুর-শাশুড়িকে বাবা-মা ডাকা নিষেধ নয়; বরং এটি সৌহার্দ্যতা ও উত্তম শিষ্টাচারের নিদর্শন। কেননা বংশপরিচয় প্রকাশ করা উদ্দেশ্য না হলে বরং কোন সন্মানিত ব্যক্তিকে সন্মানপ্রদর্শণ উদ্দেশ্য হলে তাঁকে বাবা কিংবা মা বলার নজির কোরআন-সুন্নাহয় রয়েছে। যেমন পবিত্র কোরআনে মহানবী (সা.)-এর স্ত্রীদেরকে মুমিনদের মা এবং ইব্রাহিম (আ.)-কে মুসলিম-উম্মাহর বাবা বলা হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেন:
النَّبِيُّ أَوْلَى بِالْمُؤْمِنِينَ مِنْ أَنفُسِهِمْ وَأَزْوَاجُهُ أُمَّهَاتُهُمْ
নবী মুমিনদের নিকট তাদের নিজেদের অপেক্ষা অধিক ঘনিষ্ঠ এবং তাঁর স্ত্রীগণ তাদের মা ।(সূরা আহযাব, আয়াত: ৬)
অন্য এক আয়াতে আল্লাহ বলেন:
مِّلَّةَ أَبِيكُمْ إِبْرَاهِيمَ هُوَ سَمَّاكُمُ الْمُسْلِمينَ
এটা তোমাদের বাবা ইব্রাহিমের মিল্লাত (ধর্মাদর্শ); তিনি পূর্বে তোমাদের নামকরণ করেছেন ‘মুসলিম’। (সূরা হাজ্জ, আয়াত: ৭৮)
অনুরূপভাবে হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর চাচী আবু তালিবের স্ত্রী আলী (রা.)-এর মাকে মা বলে ডেকেছেন। তাঁর নাম ছিল ফাতিমা বিনতে আসাদ বিন হাশিম (রা.)। ফাতিমা যখন মারা যান তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর ঘরে এসে তাঁর মাথার কাছে বসেন এবং বলেন,
رحِمَك اللَّهُ يا أمِّي كنتِ أمِّي بعدَ أمِّي تجوعينَ وتُشبِعينَني وتَعرَينَ وتُكسينني وتمنعينَ نفسَك طيِّبَها وتطعمينَني تريدينَ بذلِك وجهَ اللَّهِ
অর্থাৎ, ও আম্মা! আল্লাহ আপনার ওপর রহম করুন। আমার মায়ের পর আপনিই আমার মা ছিলেন। আপনি ক্ষুধার্ত থেকেও আমাকে পেট ভরে খাইয়েছেন, আপনি নিজে কাপড় না পরেও আমাকে কাপড় পরিয়েছেন, নিজেকে না দিয়ে আপনি আমাকে ভালো খাবার খাইয়েছেন, আপনি শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আখেরাত চেয়েছিলেন। (মাজমাউযযাওয়াইদ, বর্ণনা: ১৫৩৯৯)
উল্লেখ্য, যেসব হাদিসে অন্যকে বাবা বলতে নিষেধ করা হয়েছে, যেমন এক হাদিসে এসেছে,
من ادعى إلى غير أبيه وهو يعلم أنه غير أبيه فالجنة عليه حرام
“যে ব্যক্তি পরের বাবাকে নিজের বাবা বলে, অথচ সে জানে যে, সে তার বাবা নয়, সে ব্যক্তির জন্য জান্নাত হারাম।” (সহিহ বুখারী, হাদিস: ৬৩৮৫)
এ জাতীয় হাদিস দ্বারা উদ্দেশ্য হল, বংশপরিচয় প্রকাশ করার ক্ষেত্রে আসল পরিচয় গোপন রেখে নিজের বাবার নাম উল্লেখ না করে, অন্যের নাম উল্লেখ করা। যেমন-আইডি কার্ড, পাসপোর্ট, জন্মনিবন্ধন অথবা এমন কোনো দলিল বা স্থান যেখানে কোনো ব্যক্তির জন্মদাতা বাবার নাম উল্লেখ করা জরুরি হয়, সেখানে যদি অন্য কারো নাম উল্লেখ করা হয় তাহলে তা হারাম হয়।
কিন্তু যেহেতু শ্বশুর-শাশুড়িকে বাবা-মা ডাকার দ্বারা বংশপরিচয় গোপন হয় না এবং গোপন করার উদ্দেশ্যও কারো থাকেনা, তাই শশুর-শাশুড়িকে বাবা-মা বলা হাদিসের নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত নয় বিধায় তা জায়েয।
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র:https://www.drkhalilurrahman.com/?p=29621&preview=true