প্রশ্ন
আমরা জানি ইসলামী শরীয়তে কোনো ধরনের ছবি বানানো বা যান্ত্রিক উপায়ে তোলা নিষিদ্ধ। কিন্তু বর্তমান সমাজে কেউ কেউ ছবি ছাপানোকে জায়েয বলেন এবং যেই ছবিকে সম্মান প্রদর্শন করা হয় না, সেই সব ছবিকে জায়েয বলে দাবি করছে। এ বিষয়ে দলিলসহ বিস্তারিত জানতে চাই।
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
حامدا و مصليا و مسلما
প্রচারপত্রে ছবি ছাপানো নাজায়েয। ছবির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা না হলেও একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ছবি প্রিন্ট করা নাজায়েয।
প্রকাশ থাকে যে, হাদিসে ব্যাপকভাবে যে কোনো প্রাণীর ছবি বানানো ও নির্মাণ করতে নিষেধ করা হয়েছে এবং এ ব্যাপারে কঠোর ধমকি এসেছে। চাই তার সম্মান করা হোক বা না হোক।
সহিহ বুখারিতে আছে, আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি,
إِنّ أَشَدّ النّاسِ عَذَابًا عِنْدَ اللهِ يَوْمَ القِيَامَةِ المُصَوِّرُونَ.
কিয়ামত দিবসে সবচেয়ে কঠিন আযাবের সম্মুখীন হবে ছবি অঙ্কনকারীরা। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৯৫০)
হাদিসের কিতাবাদিতে ছবি বানানো ও নির্মাণের শাস্তির ব্যাপারে এজাতীয় আরো অনেক হাদিস বর্ণিত আছে। তদ্রুপ প্রাণীর যে কোনো ধরনের ছবি ব্যবহারকেও হাদিসে নিষেধ করা হয়েছে। চাই তার সম্মান করা হোক বা না হোক। সহিহ বুখারির এক হাদিসে এসেছে, রাসূল (সা.) সফরে থাকা অবস্থায় আয়েশা (রা.) তাঁর ঘরে ছবিবিশিষ্ট একটি পর্দা ঝুলিয়েছিলেন। রাসূল (সা.) সফর থেকে ফিরে এসে তা ছিঁড়ে ফেলেন এবং ছবি সম্পর্কে ভয়াবহ শাস্তির কথা শোনান। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৯৫৪)
এজাতীয় হাদিস ও আছারের ব্যাপকতাকে সামনে রেখে ইমাম নববী, ইবনে হাজার আসকালানী, বদরুদ্দীন আইনী ও মোল্লা আলী আলকারী প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ বলেছেন, প্রাণীর যে কোনো ধরনের ছবি বানানো ও তার ব্যবাহর নাজায়েয ও হারাম; চাই তার সম্মান করা হোক বা না হোক। হাঁ, সম্মান করা হলে তার ভয়াবহতা তো আরো বেশি হবে এবং তা একধরনের শিরকতুল্য গোনাহ হবে।
আর ডিজিটাল ছবি উক্ত নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ব্যাপারে উলামায়ে কেরামের দুই ধরনের মত থাকলেও প্রিন্ট করা ও ছাপানো ছবি যে উক্ত নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত- এ ব্যাপারে আরব অনারবের প্রায় সকল নির্ভরযোগ্য আলেম একমত। তবে পাসপোর্ট, আইডি কার্ড ইত্যাদি আইনগত প্রয়োজনে প্রিন্ট করা জায়েয হবে।
উল্লেখ্য, ডিজিটাল ছবির ব্যাপারে দুই ধরনের মত থাকলেও অনেক আলেমের দৃষ্টিতে অধিক নির্ভরযোগ্য মত হল এ প্রকারের ছবিও নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত। তাই এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন জরুরি।
-শরহুন নববী ১৪/৮১; উমদাতুল কারী ২২/৭০; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭; মিরকাতুল মাফাতীহ ৮/৩২৩; রদ্দুল মুহতার ১/৬৪৭
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র:https://www.drkhalilurrahman.com/?p=29360&preview=true