প্রশ্ন
গত শুক্রবার সকাল দশটার দিকে আমাদের এলাকার চেয়ারম্যান সাহেব নতুন রাস্তা নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন। আমি শ্রমিক হিসাবে কাজ করছিলাম। ঘণ্টাখানিক পর জুমার নামাযের সময় হয়ে যায়। কন্ট্রাক্টর সাহেবকে নামাযের কথা জানালে তিনি বলেন, ‘দুইটা পর্যন্ত কাজ চলবে। এরপর আধা ঘণ্টা বিরতি। তখন যোহর পড়ে নিও।’ অতঃপর আমি ব্যথিত হৃদয়ে কাজ শুরু করলে এক মুরব্বী শ্রমিক সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, ‘বাবা রাগ কর না, এখন আমরা তার অধীনে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কাজ করার জন্য চুক্তিবদ্ধ। তাই আমাদেরকে ছুটি না দেওয়ার অধিকার তার আছে।’ মুহতারামের নিকট আমার জিজ্ঞাসা হল, আসলে কি কন্ট্রাক্টর আমাদেরকে জুমার জন্য ছুটি না দিয়ে কাজে বাধ্য করতে পারে?
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
حامدا و مصليا و مسلما
জুমার নামায গুরুত্বপূর্ণ ফরয। পবিত্র কুরআনে জুমার আযানের পর সব ধরণের ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ করে নামাযের প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اِذَا نُوْدِیَ لِلصَّلٰوةِ مِنْ یَّوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا اِلٰی ذِكْرِ اللهِ وَ ذَرُوا الْبَیْعَ، ذٰلِكُمْ خَیْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ.
হে ঈমানদারগণ! জুমার দিনে যখন নামাযের জন্য আযান দেওয়া হয়, তখন আল্লাহর স্মরণের দিকে দ্রুত ধাবিত হও এবং বেচাকেনা বন্ধ করে দাও। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝ। (সূরা জুমুআ, আয়াত: ৯)
ফকীহগণ এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ক্রয়-বিক্রয়ের মত অন্যান্য দুনিয়াবী ব্যস্ততাও নিষিদ্ধ। এক হাদিসে রাসূল (সা.) জুমার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে বলেন-
لَيَنْتَهِيَنّ أَقْوَامٌ عَنْ وَدْعِهِمُ الْجُمُعَاتِ، أَوْ لَيَخْتِمَنّ اللهُ عَلَى قُلُوبِهِمْ، ثُمّ لَيَكُونُنّ مِنَ الْغَافِلِينَ.
অর্থাৎ লোকেরা যেন কোনোভাবেই জুমার নামায না ছাড়ে। নচেৎ আল্লাহ তাআলা তাদের অন্তরে মোহর মেরে দিবেন। অতপর তারা অবশ্যই গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৬৫)
সুতরাং শরয়ী কোনো ওযর ছাড়া জুমার নামায ছাড়া যাবে না। কারো অধীনে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কাজে নিয়োগ হলেও কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব হল অধীনস্তদের জুমা পড়ার সুযোগ দেওয়া। জুমার সময় কাজে আটকে রেখে পরে যোহর পড়তে বলা জায়েয নয়। নিয়োগকর্তার এ অধিকার নেই। জোর করে এমনটি করলে শ্রমিকের জুমা না পড়ার গুনাহের ভার নিয়োগকর্তার উপর বর্তাবে। আর পূর্ব থেকে জানা থাকলে শ্রমিকের জন্যও এধরনের কাজে চুক্তিবদ্ধ হওয়া জায়েয হবে না।
-তাফসীরে রূহুল মাআনী ২৮/১০৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৪৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২১০; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৫৩
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র:https://www.drkhalilurrahman.com/?p=28910&preview=true