প্রশ্ন
আমার বিয়ের পাঁচ বছর চলছে। আমাদের তিন বছরের দুটি সন্তান রয়েছে। পারিবারিক কিছু বিষয় নিয়ে আমাদের মাঝে খুব ঝগড়া হয়। ঝগড়ার এক পর্যায়ে রাগ করে আমি তাকে তিন তালাক দিয়ে ফেলি। কিন্তু আমি পরে নিজের ভুল বুঝতে পেরে অনুত্প্ত হই। তবে তাকে ফিরিয়ে আনার সুযোগ না থাকায় আমরা পৃথক হয়ে যাই। তার ইদ্দত শেষ হলে অন্যত্র বিবাহ বসে। বিয়ের প্রথম দিন তারা একসাথে রাত্রী যাপন করে থাকলেও তার ভাষ্য অনুযায়ী তাদের মাঝে স্বামী-স্ত্রী সুলভ কোনো কিছু ঘটে নি। পরের দিন তার স্বামী বাইক এক্সিডেন্টে মারা যায়। আমার জানার বিষয় হলো, যেহেতু অন্যত্র তার বিয়ে হয়েছে এবং নতুন স্বামীর সাথে তার রাত্রী যাপনও করা হয়েছে, সুতরাং এমতাবস্থায় কি আমি তাকে পুনরায় বিবাহ করতে পারব?
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
حامدا و مصليا و مسلما
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ঐ মহিলাকে আপনি এখনই বিবাহ করতে পারবেন না। কেননা তিন তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে পুনরায় বিবাহ করার জন্য ইদ্দতের পর ঐ মহিলা অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হয় এবং নতুন স্বামীর সাথে সহবাস হওয়াও জরুরী। এরপর যদি ঐ স্বামী মৃত্যুবরণ করে অথবা তাকে তালাক দিয়ে দেয় তাহলে ঐ স্বামীর মৃত্যু বা তালাকের ইদ্দতের পর মহিলাটি আপনার সাথে নতুন করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র রাত্রি যাপন বা নির্জনবাস যথেষ্ট নয়। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ عُرْوَةُ بْنُ الزّبَيْرِ، أَنّ عَائِشَةَ أَخْبَرَتْهُ: أَنّ امْرَأَةَ رِفَاعَةَ القُرَظِيِّ جَاءَتْ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ، فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللهِ، إِنّ رِفَاعَةَ طَلّقَنِي فَبَتّ طَلاَقِي، وَإِنّي نَكَحْتُ بَعْدَهُ عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ الزَّبِيرِ القُرَظِيّ، وَإِنّمَا مَعَهُ مِثْلُ الهُدْبَةِ، قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: لَعَلّكِ تُرِيدِينَ أَنْ تَرْجِعِي إِلَى رِفَاعَةَ؟ لاَ، حَتّى يَذُوقَ عُسَيْلَتَكِ وَتَذُوقِي عُسَيْلَتَهُ.
হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, হযরত রিফাআ কুরাযী (রা.)-এর স্ত্রী রাসূল (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! রিফাআ আমাকে তিন তালাক দিয়েছে। অতঃপর আমি আব্দুর রহমান কুরাযীর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। কিন্তু সে দুর্বল ব্যক্তি। তখন রাসূল (সা.) বললেন, সম্ভবত তুমি রিফাআর কাছে ফিরে যেতে চাচ্ছো? তা পারবে না, যতক্ষণ না তোমাদের মাঝে সহবাস না হয়। (সহিহ বুখারি, হাদিস ৫২৬০)
উল্লেখ্য, তালাক হচ্ছে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্নকারী চূড়ান্ত পদক্ষেপ। দাম্পত্য জীবনের সমস্যা জটিল হয়ে পড়লে এবং সমস্যা সমাধানের আর কোনো উপায় না থাকলে তা থেকে নিষ্কৃতির পথমাত্র। তালাকের ব্যাপারে অত্যন্ত ভেবে-চিন্তে বিজ্ঞজনের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত। রাগের বশবর্তী হয়ে তালাক দেওয়া অন্যায় আর একত্রে তিন তালাক দেয়া গুনাহের কাজ। মুসলমানদের এসব থেকে বেঁচে থাকা কর্তব্য।
-আলমাবসূত, সারাখসী ৬/৮; আলবাহরুর রায়েক ৪/৫৬, ১৫৪; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/৫৫১; বাদায়েউস সানায়ে ৩/২৯৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩০৬; রদ্দুল মুহতার ৩/১১৯, ৪১
আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم
উত্তর দিচ্ছেন:
ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী
সূত্র:https://www.drkhalilurrahman.com/?p=26813&preview=true